একটি পুরানো লুঙ্গি পরে মাঠে দাঁড়িয়ে বাবার চোখে জল। পাশে সদ্য নির্বাচিত পুলিশ কনস্টেবল ছেলে—চোখে গর্ব, কাঁধে দায়িত্ব। মাত্র ১২০ টাকা দিয়েই পেয়েছে স্বপ্নের চাকরি। না, কেউ সুপারিশ করেনি। কোনো নেতার চিঠি ছিল না, ছিল না টাকা-পয়সার দাপট। ছিল শুধু যোগ্যতা, সাহস আর এক মানুষের সৎ নেতৃত্ব নরসিংদী পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান। একটি সকাল, যা বদলে দিলো ২৩টি জীবন
নরসিংদী পুলিশ লাইন্সে সেই সকালে বাতাসও যেন থমকে গিয়েছিল স্বজনদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে।
পুলিশ সুপার যখন নামগুলো একে একে ঘোষণা করলেন, কেউ কেঁদে ফেলল আনন্দে, কেউ মাটিতে সেজদা দিলো। চোখে মুখে বিস্ময়—”ঘুষ না দিয়ে সত্যিই চাকরি পাওয়া যায়? সেই ভিড়ের মধ্যে এক মা জড়িয়ে ধরেছিলেন মেয়েকে জীবনে প্রথম কোনো আত্মীয়তা ছাড়াই পুলিশের চাকরি! এক ছেলে কাঁদছিল বাবার কাঁধে—যে বাবা কৃষির কাজ করে কোনোরকমে ছেলেকে বই কিনে দিয়েছিলেন।
চাকুরী পেয়ে সানজিদা মা মাজেদা বেগম কান্না চোখে বলেন, আমার খুব দরিদ্র পরিবার। মেয়ে বলতো, পুলিশ হবে কিন্তু চিন্তা করতাম এটা সম্ভব নয়। কারণ আমরা গরীব। এতো এতো টা ঘুষ কোথায় পাবো। তবে ১২০ টাকায় আমার মেয়ে চাকরি হলো আমি এখনও বিশ্বাসই করতে পারছিনা। আজ যা দেখলাম চোখের সামনে আল্লাহ যানে ভিতরে কত শান্তি লাগছে আনন্দ হচ্ছে। নরসিংদীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অন্য তরুণ-তরুণী নিজেদের তৈরি করেছেন সীমিত সামর্থ্যে।
তারা বিশ্বাস করতেন, একদিন স্বপ্ন ধরা দেবেই।
আজ আমার মেয়ের মতো তাদের হাতেও পুলিশের নিয়োগপত্র একটি আত্মবিশ্বাস, একটি পরিচয়, একটি সম্মান
চাকরির পেয়েছেন আবেগ আপ্লুত হয়ে সদ্য কনস্টেবল এর নিয়োগপ্রাপ্ত বলেন, ঘাম ঝরানো স্বপ্ন আর একটি নিষ্পাপ বিশ্বাসের জয় হলো আমাদের। ১২০ টাকায় চাকরির শুধুই স্বপ্ন মনে হতো। সেটা পূরণ হবে সেটা কল্পনাও ছিলনা। পরিবারে সবাই অনেক খুশি হবে। এতো দিনের পরিশ্রম সার্থক। যখন মানুষ পুলিশের নিয়োগ মানেই ঘুষ, দালাল, দুর্নীতি ভাবেঠিক তখনই নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান স্যার গড়েছেন এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। স্যার দেখিয়ে দিয়েছেন, পুলিশ মানে ঘুষ নয়, পুলিশ মানে ন্যায়। আজ নরসিংদীতে শুধু চাকরি হয়নি, হয়েছে বিশ্বাসের পুনর্জন্ম। এই নিয়োগ শুধু ২৩ জনের জীবনের গল্প নয়। এটি বাংলাদেশের সম্ভাবনার গল্প। যেখানে একজন পুলিশ সুপার ঘুষমুক্ত, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করেন,
সেখানে জাতি আশা করতে পারেসত্য এখনো বেঁচে আছে।
নরসিংদী পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান বলেন, “আমরা চাই সৎ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক তরুণরা পুলিশে আসুক। স্বচ্ছ প্রক্রিয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। তারাই আগামী পুলিশের অহংকার হবে। পুলিশের চাকুরির ক্ষেত্রে ১০০% সচ্ছলতা নিশ্চিত করাই আমার দ্বায়িত্ব ছিল।
বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: ফোন: +৮৮ ০১৭৩৫২৩৭১৯০,
পলাশ উপজেলা গেট, পলাশ, নরসিংদী
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত